৬০০ মাইল দুরত্ব (প্রথম পর্ব)

Sanjib Sen
4 min readJan 31, 2021

= “মিস্টার ফ্লিক, অদ্ভুত একটা সমস্যায় পড়ে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।”

=”কি সমস্যা বলুন?”

=”না আসলে ফোনে বলার মত বিষয় না এটা। আপনি কিছুই বুঝবেন না। আমি কি আপনার রুমে আসতে পারি আধা ঘণ্টার জন্য?”

=”অবশ্যই। চলে আসুন”

কল এসেছে পরিসংখ্যান ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ডক্টর সামারসেট এর কাছ থেকে। অবাকই হতে হল। তিন বছরের আইটি সার্ভার এডমিন্সট্রেশন লাইফে কোন প্রফেসর এর ফোন পাইনি আজকের আগ পর্যন্ত। বেশিরভাগ আইটি সমস্যাগুলোই স্টুডেন্ট বা স্টাফদের নিজের ভুলে ঘটে। যাই হোক, প্যাট্রিস কে ডেকে ২ কাপ কফির অর্ডার দিলাম। এই শীতে কেন জানিনা ড্রিংকের থেকে কফিই বেশী মানানসই মনে হল।

ভদ্রলোক এলেন কাটায় কাটায় ঠিক ৩০ মিনিট পরেই। দেশের এই ব্যাপারটা আসলে অনেক ভাল লাগে। মানুষ টাইমিং এর ব্যাপারে খুবই সচেতন।

=”বসুন, কফি, চা নাকি ড্রিংক?”

=”কফিই চলবে।আসলে আপনার বেশি সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না।”

=”আচ্ছা, বলুন কি সমস্যার কথা বলছিলেন যেন?”

=”আমরা ডিপার্ট্মেন্টের বাইরে কাউকে ইমেইল পাঠাতে সমস্যা ফেইস করছি”

=”হ্যা, বলুন কি ধরনের সমস্যা?”

=”আমরা আসলে ৬০০ মাইলের বেশি দুরত্বে থাকা কাউকে ইমেইল পাঠাতে পারছি না।”

=”কিহ?”, অনেক চেষ্টা করেও সদ্য মুখে নেয়া কফির চুমুকটুকু আটকাতে পারলাম না। মনে হল জিহবাটা পুরো পুড়েই গেল।

=”জ্বি, আমরা এখান থেকে ৬০০ মাইলের বেশি দুরত্বে কোন ইমেইল পাঠাতে পারছি না।”, আমার অপ্রস্তুত বা সারপ্রাইজড হওয়া কোনটাতেই তিনি বিচলিত হলেন না। “আসলে, ৬০০ মাইলের থেকে একটু বেশি। বলতে পারেন ৬২০ মাইলস। কিন্তু এর বেশি না একদম ই।”

=”উম, আসলে প্রফেসর, ইমেইল এইভাবে কাজ করে না সাধারনত।”, বুঝানোর চেস্টা করলাম কিছুটা। “আপনার কি জন্য মনে হচ্ছে আপনি ৬০০ মাইলের বেশি ইমেইল পাঠাতে পারছেন না? “

=”আসলে কিভাবে বলি, ব্যাপারটা আমার ভাবনা নিয়েও না। দেখুন কয়েকদিন আগে যখন প্রথম দেখি ব্যাপারটা… “

=” কিহ?, আপনি এতদিন ধরে কাউকে ইমেইল পাঠাননি?”

=” না না আসলে ওরকম না, ইমেইল পাঠাতে পেরেছি কিন্তু…

=” সেগুলো ৬০০ মাইলের কম দুরত্বে যারা ছিল তাইতো?”

=” হ্যা!”

=” তাহলে এর আগে কেন আপনি আসেননি?”

=” আসলে আমরা এর আগে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করি নি তাই আমরা শিওর ছিলাম না আসলে কি ঘটসে।” “যাই হোক এরপর আমি ভূগোল ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর র‍্যাচেল এর সাথে এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করি” পকেট থেকে একটি ক্ষুদ্র ম্যাপ বের করতে করতে বললেন ভদ্রলোক। “এই দেখুন, একটি বৃত্ত আঁকা বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুতে ইশারা করে দেখিয়ে বললেন তিনি। “এটি হলো আমাদের ডিপার্ট্মেন্ট এর ক্যাম্পাস আর এর বাইরে পুরো পরিধি জুড়ে আমাদের ইমেইল এর রেঞ্জ, অর্থাৎ ৬০০ মাইল।”

=”এবং এটা কি মিন করছে?”

=”এই যে রেঞ্জের মধ্যে আর বাইরে যে শহরগুলো আছে মোটামুটি যথেষ্ট পরিমান ইমেইল পাঠিয়ে আমরা এনাফ ডেটা কালেক্ট করেছি। এই যে দেখুন”, পকেট থেকে আরেকটি কাগজ বের করে এগিয়ে দিলেন ভদ্রলোক।

=” ক্যারোলিনা ৬০০ মাইলস, সাক্সেস… সাউথ ডাকোটা ৪৯০ মাইলস সাক্সেস… প্রিন্সটন ৬৪০ মাইলস ফেইল্ড… ওয়াশিংটন ৭৩০ মাইলস, ফেইল্ড…”

=”বুঝতে পারছি।”

=”আপনার কাছে কি মনে হয় কি কারনে এমন হতে পারে?”

=”আসলে এই ইস্যুটা দেখে অবাক হইনি এরকম বললে অস্বীকার করা হবে। ইন ফ্যাক্ট, বলতে পারেন এইধরনের কেস এইবার ই প্রথম।”

=”আপনি ভুত প্রেতে বিশ্বাস করেন না নিশ্চয়ই?”, কিছুটা সন্দেহের দিকে তাকিয়ে বললেন ডক্টর সামারসেট।

=” আরেহ না না। হাহা কি বলেন। আমি বলতে গেলে পুরো সাইন্স গাই। এসব আজগুবি জিনিস বোগাস লাগে।”, অপ্রস্তুত হলেও কথাটা উড়িয়ে দিতে সক্ষম হলাম।

=” আচ্ছা তাহলে আপনি ব্যাপারটা একটু দেখুন কেননা বুঝতেই পারছেন ইউনিভার্সিটিতে এটা নিয়ে বেশ বড় একটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের কে “সার্ভার আপগ্রেড চলছে” বলে চুপ রাখা গেলেও বেশিদিন লাগবে না ব্যাপারটা ভাইরাল হতে। আর সেটা হলে আমাদের ইউনিভার্সিটির জন্য খুব বাজে একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে। বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই।”

=”অবশ্যই। এ ব্যাপারে কোন চিন্তা করবেন না আপনি। আজ বিকেলেই আমি ডিপার্ট্মেন্ট এ যাচ্ছি”

=”থ্যাংক্স। আজ তাহলে আসি। কিছু তথ্য লাগলে পার্সোনাল নাম্বারটাও দিয়ে দিচ্ছি”। হ্যান্ডশেক শেষে আর এক মুহুর্তও দেরি করলেন না ষাটোর্ধ এই ভদ্রলোক।

প্রফেসরের বিদায়ের পরে সত্যি বলতে ব্যাপারটা নিয়ে ভালোই দ্বিধায় পড়ে গেলাম। তারচেয়েও বড় কথা ব্যাপারটা নিয়ে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠিদের সাথে আলোচনাও করতে পারব না। তিনি স্পষ্টতই বলে গেছেন ব্যাপারটা নিয়ে জানাজানি হলে অনেক বাজে হবে।

নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে শুরু করলাম। “ধুর ছাই! নিশ্চয়ই কোন ইদুর লং রেঞ্জের কোন ব্রডব্যান্ড সার্ভারের তার কেটে ফেলছে বিধায় এমন হচ্ছে।“

কিন্তু বলেই বুঝলাম কতটা ইলোজিক্যাল এটা। কারন ইমেইল এভাবে কাজ করে না। ব্রডব্যান্ড এর সাথে কোন সম্পর্কই নেই এক্ষেত্রে। “হোক, বিকেলেই দেখা যাবে!”

কোন রকমে দুপুরটা পার করে বিকেলের দিকে হাটা দিলাম পরিসংখ্যান অনুষদের দিকে। বিল্ডিং টা বেশ পুরনো হলেও রঙচং করে যেন সেই বয়সের ছাপ ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ভিতরে ঢুকলে করিডোর এর কর্নার, এপাশে ওপাশে তাকালেই বুঝা যায় অনেক পুরনো এই বিল্ডিং। যাই হোক প্রফেসরের সাথে দেখা করে ডিন এর রুমে গেলাম। তাকে বেশ বিচলিত মনে হল দেখে।

“বুঝলেন মিস্টার, এইরকম অবস্থা দেখে হাসবো না কাদবো কিছুই বুঝতে পারছি না”। “প্রথমে তো নিজের চোখ কেও বিশ্বাস করাতে পারিনি”।

=”হ্যা বুঝতে পারছি। আমারো আসলে একই অবস্থা।” বলে উনার কম্পিউটারে কিছু বেসিক ইমেইল সার্ভার মেইন্ট্যানেন্স টেস্ট করতে শুরু করলাম। অবাক হতে হলো কম্পিউটারের স্পেসিফিকেশন দেখে, ৫১২ এমবি র‍্যাম, এএমডি এথলন চিপ আর ব্রডব্যান্ড ও দেখি ভালোই। ৫১২ কেবিপিএস। বলতে বাহুল্য বিশ্ববিদ্যালয় অথোরিটি সুশিক্ষার জন্য টেকনোলজি ব্যাবহারে কোন কার্পন্য করেননি।

=”যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে আসলেই সত্যি ব্যাপারটা!” আধা ঘন্টার কিছু ওএস, ইন্টারনেট টেস্ট আর ইমেইল টেস্টিং করে বুঝলাম। ডক্টর সামারসেটের দেখানো টেবিল এর সাথে আমার নিজের টেস্ট ও মিলে যাচ্ছে। এমনকি আমি এক্সট্রা অনেকগুলো স্টেট ও এড করেছিলাম এক্যুরেসির জন্য। কিন্তু ফলাফল একই। “আচ্ছা আমাকে আরো কিছুদিন সময় দিতে হবে”।

(চলবে…)

--

--

Sanjib Sen

Studying Undergraduate in Computer Science and Engineering at BRAC University.